প্রকাশিত: ০৭/০২/২০১৭ ১০:২২ পিএম

বিদায়ী ২০১৫-১৫ অর্থবছরে আর্থিক অনিয়ম ও হয়রানির শিকার হয়ে ৪,৫৩০টি অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন ব্যাংকের গ্রাহকরা। এ সময়ে গ্রাহকরা ২,৩৮৪টি অভিযোগ ফোনে ও ২,১৪৬টি অভিযোগ লিখিতভাবে করেন। এসব অভিযোগগুলো শতভাগ নিষ্পত্তি এবং গতবছরের তুলনায় কমেছে বলে দাবি বাংলাদেশ ব্যাংকের। এসব অভিযোগের শীর্ষে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক, পরের অবস্থানে রয়েছে বেসরকারী খাতের ব্রাক ব্যাংক।

মঙ্গলবার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স রুমে গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণের বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনটির মোড়ক উন্মোচন করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, গেল অর্থবছরে সোনালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে গ্রাহেকদের প্রাপ্ত অভিযোগ ৫৬৩টি। এর পরের অবস্থানে থাকা ব্র্যাক ব্যাংকের বিরুদ্ধে মোট ৩৭৩টি অভিযোগ করেন গ্রাহকরা। তৃতীয় অবস্থানে থাকা অগ্রণী ব্যাংকের বিরুদ্ধে ২৯১টি অভিযোগ এসেছে।

একইভাবে ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে ২৬৮টি, জনতা ব্যাংকের বিরুদ্ধে ২৩১টি, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বিরুদ্ধে ২০৪টি, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ১৮৪টি, পূবালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে ১৩২টি, রূপালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে ১৩১টি ও ইস্টার্ন ব্যাংকের বিরুদ্ধে ১২৬টি অভিযোগ এসেছে।

এদিকে গত অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে ১২টি, বেসরকারি ব্যাংকে ৭১টি ও বিদেশী ব্যাংকে ২টি পরিদর্শন কার্যকম পরিচালনা করা হয়।

এ সময়ে সবচেয়ে বেশি ১৯ বার পরিদশর্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় নতুন ব্যাংক হিসেবে পরিচিত ফার্মাস ব্যাংকে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিদর্শন কার্যক্রম চালানো হয় ৮ বার। এছাড়া অগ্রনী ব্যাংকে ৬ বার, ব্রাক ব্যাংক, সাউথইস্ট ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে ৪ বার করে পরিদর্শন চালায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এফআইসিএসডি।

প্রতিবেদনের তথ্য মতে, গত পাঁচ বছরে ব্যাংকিং খাতে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগের পরিমাণ ১৯,৪৫০টি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪,৫৩০টি অভিযোগের মধ্যে ২৩৮৪ অভিযোগ ফোনে ও ২,১৪৬টি অভিযোগ লিখিতভাবে করেন বিভিন্ন ব্যাংকের গ্রাহকরা। এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩,৯৩০টি অভিযোগ আসে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের গ্রাহকরা ৪,৪৭৬টি অভিযোগ করেছিল। ২০১২-১৩ অর্থবছরের গ্রাহকরা ৪,২৯৬টি অভিযোগ করেছিল।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ৫৮ দশমিক ৭০ শতাংশ অভিযোগ এসেছে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রয়াত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে ২৮ দশমিক ২৮ শতাংশ, বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ, বিশেষায়িত ব্যাংকের বিরুদ্ধে ৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ, এনআরবি ব্যাংকের বিরুদ্ধে শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ অভিযোগ এসেছে।

২০১৫-১৬ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাপ্ত অভিযোগগুলোর মধ্যে টেলিফোনে সাধারণ ব্যাংকিং সংক্রান্ত অভিযোগের সংখ্যা ছিল ১,১১৬টি, ঋণ ও অগ্রিম সংক্রান্ত ৩৫৮টি, কার্ড সংক্রান্ত ১৪৭টি, রেমিটেন্স সংক্রান্ত ১২৭টি, মোবাইল ব্যাংকিং সংক্রান্ত ৫৮টি, ট্রেড বিল সংক্রান্ত ৩১টি, ব্যাংক গ্যারান্টি সংক্রান্ত ৪ বার ও বিবিধ অভিযোগ ছিল ৫৪৩টি।

এছাড়া গতবছর লিখিতভাবে ২,১৪৬ টি অভিযোগ আসে। সাধারণ ব্যাংকিং সংক্রান্ত ৪৪৬টি, ঋণ ও অগ্রিম সংক্রান্ত ৩৮৪টি, বৈদেশিক বিল সংক্রান্ত ২৯২টি, স্থানীয় বিল সংক্রান্ত ২০৪টি, কার্ড সংক্রান্ত ১৫৬টি, ব্যাংক গ্যারান্টি সংক্রান্ত ১১০টি, রেমিটেন্স সংক্রান্ত ৫৭টি, মোবাইল ব্যাংকিং সংক্রান্ত ৫৬টি এবং বিবিধ অভিযোগ ছিল ৪৪১টি।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, বর্তমান ব্যবস্থায় গ্রাহকের হয়রানি ও ঝামেলামুক্ত সেবা প্রদান ব্যাংকিং খাতের একটি অঙ্গীকার হওয়া উচিত। আর এ অঙ্গীকার পূরণে সহায়তা করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বদ্ধপরিকর। আমাদের গ্রাহকভিত্তিক সেবা থাকতে হবে; প্রশিক্ষণমূলক প্রোগাম বেশি থাকতে হবে। বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ, ফ্রন্ট ডেক্সকে প্রাধান্য দিতে হবে। গ্রাহকদের সব ধরণের অভিযোগ গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিতে হবে। একই সঙ্গে আন্তরিকতার সাথে সেই অভিযোগ সমাধান করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক এ কে এম আমজাদ হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান, কনজুমার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম রহমান এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের আনিস এ খানসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বিবার্তা/

পাঠকের মতামত